বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
● পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল উদ্বোধন      ● সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে      ● বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে হাতিরঝিল থেকে পানি নিচ্ছে হেলিকপ্টার      ● বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের খোঁজখবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী      ● বঙ্গবাজারে ফায়ার সার্ভিসের ৫০ ইউনিট, ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন      ● ৫ ঘণ্টায়ও নেভেনি বঙ্গবাজারের আগুন      ● ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে হামলা, টিয়ারশেল নিক্ষেপ      ● আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের সাথে নৌ-সেনা ও বিমানবাহিনী      ● বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড: আশপাশের ৪ ভবনে ছড়িয়েছে আগুন      ● জ্বলছে বঙ্গবাজার : প্রতিনিয়ত বাড়ছে আগুনের তীব্রতা     
হুমায়ুন আজাদের তিন কবিতা
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , সোমবার ১১ : ০২ এএম   প্রদর্শিত হয়েছে ৮২৬৮ বার

সেই কবে থেকে – হুমায়ুন আজাদ


সেই কবে থেকে জ্বলছি

জ্ব’লে জ্ব’লে নিভে গেছি ব’লে

তুমি দেখতে পাও নি ।


সেই কবে থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছি

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাতিস্তম্ভের মতো ভেঙে পড়েছি ব’লে

তুমি লক্ষ্য করো নি ।


সেই কবে থেকে ডাকছি

ডাকতে ডাকতে স্বরতন্ত্রি ছিঁড়ে বোবা হয়ে গেছি ব’লে

তুমি শুনতে পাও নি ‘।


সেই কবে থেকে ফুটে আছি

ফুটে ফুটে শাখা থেকে ঝ’রে গেছি ব’লে

তুমি কখনো তোলো নি ।


সেই কবে থেকে তাকিয়ে রয়েছি

তাকিয়ে তাকিয়ে অন্ধ হয়ে গেছি ব’লে

একবারো তোমাকে দেখি নি ।


আমাকে ভালোবাসার পর – হুমায়ুন আজাদ


আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার,

যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই আগের মতো নেই

উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত।


যে কলিংবেল বাজে নি তাকেই মুর্হুমুহু শুনবে বজ্রের মত বেজে উঠতে

এবং থরথর ক’রে উঠবে দরোজাজানালা আর তোমার হৃৎপিন্ড।

পরমুহূর্তেই তোমার ঝনঝন-ক’রে ওঠা এলোমেলো রক্ত

ঠান্ডা হ’য়ে যাবে যেমন একাত্তরে দরোজায় বুটের অদ্ভুদ শব্দে

নিথর স্তব্ধ হ’য়ে যেত ঢাকা শহরের জনগণ।


আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার।

রাস্তায় নেমেই দেখবে বিপরীত দিক থেকে আসা প্রতিটি রিকশায়

ছুটে আসছি আমি আর তোমাকে পেরিয়ে চ’লে যাচ্ছি

এদিকে-সেদিকে। তখন তোমার রক্ত আর কালো চশমায় এত অন্ধকার

যেনো তুমি ওই চোখে কোন কিছুই দ্যাখো নি।


আমাকে ভালবাসার পর তুমি ভুলে যাবে বাস্তব আর অবাস্তব,

বস্তু আর স্বপ্নের পার্থক্য। সিঁড়ি ভেবে পা রাখবে স্বপ্নের চূড়োতে,

ঘাস ভেবে দু-পা ছড়িয়ে বসবে অবাস্তবে,

লাল টুকটুকে ফুল ভেবে খোঁপায় গুঁজবে গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্ন।


না-খোলা শাওয়ারের নিচে বারোই ডিসেম্বর থেকে তুমি অনন্তকাল দাঁড়িয়ে

থাকবে এই ভেবে যে তোমার চুলে ত্বকে ওষ্ঠে গ্রীবায় অজস্র ধারায়

ঝরছে বোদলেয়ারের আশ্চর্য মেঘদল।


তোমার যে ঠোঁটে চুমো খেয়েছিলো উদ্যমপরায়ণ এক প্রাক্তন প্রেমিক,

আমাকে ভালবাসার পর সেই নষ্ট ঠোঁট খঁসে প’ড়ে

সেখানে ফুটবে এক অনিন্দ্য গোলাপ।


আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার।

নিজেকে দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্ত মনে হবে যেনো তুমি শতাব্দীর পর শতাব্দী

শুয়ে আছো হাসপাতালে। পরমুহূর্তেই মনে হবে

মানুষের ইতিহাসে একমাত্র তুমিই সুস্থ, অন্যরা ভীষণ অসুস্থ।


শহর আর সভ্যতার ময়লা স্রোত ভেঙে তুমি যখন চৌরাস্তায় এসে

ধরবে আমার হাত, তখন তোমার মনে হবে এ-শহর আর বিংশ শতাব্দীর

জীবন ও সভ্যতার নোংরা পানিতে একটি নীলিমা-ছোঁয়া মৃণালের শীর্ষে

তুমি ফুটে আছো এক নিষ্পাপ বিশুদ্ধ পদ্ম-

পবিত্র অজর।


আমাকে ছেড়ে যাবার পর – হুমায়ূন আজাদ


আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর শুনেছি তুমি খুব কষ্টে আছো।

তোমার খবরের জন্য যে আমি খুব ব্যাকুল, তা নয়।

তবে ঢাকা খুবই ছোট্ট শহর।

কারো কষ্টের কথা এখানে চাপা থাকে না।


শুনেছি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর তুমি খুবই কষ্টে আছো।

প্রত্যেক রাতে সেই ঘটনার পর নাকি আমাকে মনে পড়ে তোমার।

পড়বেই তো, পৃথিবীতে সেই ঘটনা তুমি-আমি মিলেই তো প্রথম

সৃষ্টি করেছিলাম।


যে-গাধাটার হাত ধরে তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে সে নাকি এখনো

তোমার একটি ভয়ংকর তিলেরই খবর পায় নি।

ওই ভিসুভিয়াস থেকে কতটা লাভা ওঠে তা তো আমিই প্রথম

আবিষ্কার করেছিলাম।


তুমি কি জানো না গাধারা কখনো অগ্নিগিরিতে চড়ে না?

তোমার কানের লতিতে কতটা বিদ্যুৎ আছে,

তা কি তুমি জানতে?

আমিই তো প্রথম জানিয়েছিলাম ওই বিদ্যুতে দপ ক’রে জ্বলে উঠতে পারে মধ্যরাত।

তুমি কি জানো না গাধারা বিদ্যুৎ সম্পর্কে কোনো

খবরই রাখে না?


আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর শুনেছি তুমি খুব কষ্টে আছো।

যে-গাধাটার সাথে তুমি আমাকে ছেড়ে চ’লে গেলে

সে নাকি ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শয্যাকক্ষে কোনো শারীরিক তাপের

দরকার পড়ে না।

আমি জানি তোমার কতোটা দরকার শারীরিক তাপ।

গাধারা জানে না।

আমিই তো খুঁজে বের করেছিলাম তোমার দুই বাহুমূলে

লুকিয়ে আছে দু’টি ভয়ংকর ত্রিভুজ।

সে- খবর পায় নি গাধাটা।

গাধারা চিরকালই শারীরিক ও সব রকম জ্যামিতিতে খুবই মূর্খ হয়ে থাকে।


তোমার গাধাটা আবার একটু রাবীন্দ্রিক।

তুমি যেখানে নিজের জমিতে চাষার অক্লান্ত নিড়ানো, চাষ, মই পছন্দ করো,

সে নাকি আধ মিনিটের বেশি চষতে পারে না।

গাধাটা জানে না

চাষ আর গীতবিতানের মধ্যে দুস্তর পার্থক্য!


তুমি কেনো আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে?

ভেবেছিলে গাড়ি, আর পাঁচতলা ভবন থাকলেই ওষ্ঠ থাকে,

আলিঙ্গনের জন্য বাহু থাকে,

আর রাত্রিকে মুখর করার জন্য থাকে সেই

অনবদ্য অর্গান?


শুনেছি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর তুমি খুবই কষ্টে আছো।

আমি কিন্তু কষ্টে নেই; শুধু তোমার মুখের ছায়া

কেঁপে উঠলে বুক জুড়ে রাতটা জেগেই কাটাই, বেশ লাগে,

সম্ভবত বিশটির মতো সিগারেট বেশি খাই।

« পূর্ববর্তী সংবাদ পরবর্তী সংবাদ »





  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ অঞ্জন কর

প্রকাশকঃ জেরীফ আফতাব কর্তৃক

জেড টাওয়ার (৬ষ্ট তলা), বাড়ী- ০৪, রোড-১৩২, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২ থেকে প্রকাশিত

ইমেইলঃ tribunenewsbd@gmail.com

© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || tribunenewsbd.com