বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
● পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল উদ্বোধন      ● সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে      ● বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে হাতিরঝিল থেকে পানি নিচ্ছে হেলিকপ্টার      ● বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের খোঁজখবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী      ● বঙ্গবাজারে ফায়ার সার্ভিসের ৫০ ইউনিট, ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন      ● ৫ ঘণ্টায়ও নেভেনি বঙ্গবাজারের আগুন      ● ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে হামলা, টিয়ারশেল নিক্ষেপ      ● আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের সাথে নৌ-সেনা ও বিমানবাহিনী      ● বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড: আশপাশের ৪ ভবনে ছড়িয়েছে আগুন      ● জ্বলছে বঙ্গবাজার : প্রতিনিয়ত বাড়ছে আগুনের তীব্রতা     
উপকূলে বিচরণে এসে মা কচ্ছপ হয়ে যায় লাশ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২২ , সোমবার ০৪ : ০৬ পিএম   প্রদর্শিত হয়েছে ৪৬৮ বার

প্রকৃতির নিয়মানুসারে চলছে কচ্ছপের ডিম পাড়ার মৌসুম। এ কারণে কক্সবাজার উপকূল জুড়ে বেড়েছে সামুদ্রিক কচ্ছপের বিচরণ। প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, টেকনাফের বদরমোকাম, শাহপরীরদ্বীপ, বাহারছড়া, মনখালী, কক্সবাজারের হিমছড়ি, প্যাচারদিয়া ও মহেশখালীর সোনাদিয়া সৈকতে দেখা মিলছে মা কচ্ছপের।


এসব সমুদ্র সৈকতে আসে বৃহদাকার সামুদ্রিক মা’কাছিম। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের সাগর সৈকতে দু’একটি কাছিম চোখে পড়লেও কক্সবাজার, হিমছড়ি, পেঁচার দ্বীপ, ইনানির সাগর সৈকতে সামুদ্রিক কাছিম আর ডিম দিতে আসে না। অপরিকল্পিত আবাসন, সৈকতে আলোর ঝিলিক ও পর্যটকের অনিয়ন্ত্রিত পদচারনায় কাছিমের ডিম দেবার পরিবেশ গত পাঁচ বছরে পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে।


বিভিন্ন উপকূল থেকে প্রায় বিশ হাজার ট্রলার মাছ শিকার করছে গভীর সমুদ্রে। জেলেরা ট্রলার থেকে ভাসাজাল, ডুবাজাল অনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রচালিত ট্রলারসহ প্রায় ৪০ থেকে ৬০ ফুট লম্বা বিহুন্দী ও লাক্ষ্যা জাল পেতে রাখে সাগরতলে। অপরদিকে হাজার কি:মি পথ পেড়িয়ে সামুদ্রিক কাছিম মা’ হবার তাড়নায় ছুটে আসে এদেশের সাগর সৈকতে। কাছিমগুলো যখন সৈকতে এসে পৌছায় তখন তারা এক একটি মস্তকবিহীন লাশ। নিথর দেহ নিয়ে ভেসে আসে জোয়ারের পানিতে। শরীরে তাদের আঘাতের দাগ। বর্তমানে কমপক্ষে ৫০ হাজার বেহুন্দী জাল রয়েছে জেলেদের কাছে। গভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে কাছিম আটকা পড়ে। জেলেরা ঝামেলা এড়াতে তাদের বৈঠা, বাঁশ, কাঠ ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে।


সামুদ্রিক কাছিম গবেষক জহিরুল ইসলামের গবেষনায় প্রতি বছর উপকূলবর্তী এলাকাতে ছয়’শ থেকে আট’শ মৃত কাছিম সৈকতে ভেসে আসে। আগত পর্যটকরা জানতেও পারেনা, কেন তারা মারা পড়ে? অথচ উপকূলীয় এলাকায় উন্নয়ন, হোটেল-মোটেলের আলোর ঝলক, প্রবাল ধ্বংস, সৈকত দূষন কাছিমের বংশ বিস্তারে বড় প্রতিবন্ধকতা। সৈকতে আলো জ্বালালে এরা সহজে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ডিম না দিয়ে ফিরে চলে যায়। কখনও আবার বালুচরে উঠতে না পেরে পানিতে ডিম দিয়ে দেয়। তবে সে ডিমগুলো থেকে কখনও বাচ্চা ফুটে না। মা হবার আকাঙ্খা অপূরণ রেখে ফিরে যেতে হয় অন্য জায়গায়।


প্রাচীনকালে মানুষ যখন থেকে সমুদ্রে যাতায়াত ও তীরে বসবাস শুরু করে তখন থেকে সামুদ্রিক কাছিমের সাথে পরিচয়। এরা সরীসৃপ ও অতি প্রাচীন সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা ১০-১৫ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে টিকে আছে। এদের জীবন চক্র বড় জটিল ও রহস্যপূর্ণ। খাদ্য গ্রহণ এক জায়গায় আবার প্রজনন ক্ষেত্র আরেক জায়গায়। এমন দূরত্ব প্রায় বারো হাজার কি:মি ব্যবধানে হতে পারে। জীবন চক্রে তারা বিভিন্ন সাগর মহাসাগরে বিচরণ করে, নানাভাবে সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষা করে আসছে।


এখন পর্যন্ত সর্বমোট সাতটি প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম বিশেজ্ঞরা সনাক্ত করেছে। এরা হলো অলিভ রিডলে, সবুজ কাছিম, হকসবিল, লগারহেড, লেদারব্যাক, ফ্লাটব্যাক ও ক্যাম্প রিডলে কাছিম। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় এখন পর্যন্ত ৫ প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিমের উপস্থিতি রয়েছে। তবে সামুদ্রিক কাছিম গবেষনা প্রতিষ্ঠান ‘মেরিন লাইফ এ্যালাইন্স’ জানায় এ সংখ্যা কমে বর্তমানে শুধু ‘অলিভ রিডলে’ বালুচরে আসছে। সামুদ্রিক কাছিমের সাথে স্থলভাগের কাছিমের অনেক অমিল রয়েছে। যেমন এরা মাথা লুকাতে পাড়ে না। এদের পা’গুলো সমুদ্রে চলার জন্য সাঁতার উপযোগী। অনেকটা নৌকাতে ব্যবহৃত বৈঠার আকৃতির। একটি সামুদ্রিক কাছিম প্রাপ্তবয়স্ক হতে ২০ থেকে ২৫ বছর সময় লাগে। ওজন চল্লিশ থেকে ষাট কেজি হয়।


স্ত্রী কাছিম প্রজাতিভেদে বছরে তিন থেকে সাতবার ডিম পেড়ে থাকে। শুকনো বালু সরিয়ে ৫০-৬০ সে:মি বা ১০০-১১০ সে:মি গভীর কলসী আকারের গর্ত করে ১০০ থেকে ১৫০টি গোলাকার সাদা ডিম দেয়। সামুদ্রিক কাছিমের বাচ্চা প্রাকৃতিক নিয়মে ডিম ফুটে বের হয়ে সমুদ্রে চলে যায়। জীবন বাচাঁতে সাগরে নেমেই টানা ৪৮ ঘন্টার মতো সাঁতরে গভীর সাগরে যায়। বাচ্চা কাছিম যে সৈকতে জন্মেছিল বয়:প্রাপ্তির পর সে বালুচরেই তারা আবার ডিম দিতে আসে। বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন কিভাবে সাগরের কাছিম নির্দিষ্ট সৈকত খুঁজে নিতে পারে। খাদ্য তালিকায় কাকড়া, শামুক-ঝিনুক, জেলিফিশ, সাগর শসা, চিংড়ি, লবষ্টার, শেওলা ও সামুদ্রিক ঘাস খেয়ে থাকে।


সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে সারা বিশ্বে হুমকীসমূহ কমানোর চেষ্টা চলছে। পরিযায়ী বলে কাছিম সংরক্ষনে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক সমন্বয় প্রয়োজন। ২০০১ সালে দক্ষিন পূর্ব এশিয়া, ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলি সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষনের জন্য একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে IOSEA ‘Marine Turtle MoU’ হিসেবে পরিচিত। মূলত সাগরের কাছিম বিষয়ে শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৪ সালে IOSEA সামুদ্রিক কাছিম সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং দক্ষিন পূর্ব এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় এলাকতে সামুদ্রিক কাছিম রক্ষার জন্য অঙ্গিকারবদ্ধ হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত নেই কোন পর্যবেক্ষন।


বর্তমানে সাগর সৈকতে মেরিন লাইফ এ্যালাইন্স নামের একটি সংস্থা সাগরের কাছিম নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু করেছে। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় তারা কাছিমের ডিম সংরক্ষণ সহ কাছিমের জীবন বৃত্তান্ত আরও রহস্য উদঘাটন করছে।


« পূর্ববর্তী সংবাদ পরবর্তী সংবাদ »





  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ অঞ্জন কর

প্রকাশকঃ জেরীফ আফতাব কর্তৃক

জেড টাওয়ার (৬ষ্ট তলা), বাড়ী- ০৪, রোড-১৩২, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২ থেকে প্রকাশিত

ইমেইলঃ tribunenewsbd@gmail.com

© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || tribunenewsbd.com