মৌলিক অধিকার ও জনস্বার্থে মামলা
মোঃ জে. আর. খান রবিন
প্রকাশ:
১৩
জুন
২০২২ ,
সোমবার
০৪ : ০৬ পিএম প্রদর্শিত হয়েছে ১০২৪ বার
|
মোঃ জে. আর. খান রবিন, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল ছবি বর্তমান বিশ্বে ৫ ধরনের আইন ব্যবস্থার মধ্যে "কমন আইন" ব্যবস্থা অন্যতম। বাংলাদেশও অন্যান্য দেশের ন্যায় এই আইন ব্যবস্থা উত্তরাধিকার সূত্রে ব্রিটিশ "কমন ল" ব্যবস্থা থেকে প্রাপ্ত । কমন ল" ভূক্ত দেশ সমূহের সংবিধানে উল্লেখিত মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য ৫ ধরনের রীটের উল্লেখ রয়েছে। যথাঃ ১. Writ of mandamus (আদেশ মূলক রীট), ২.Writ of Prohibition (নিষেধাজ্ঞা মূলক), ৩. Writ of certiorari (উৎপ্রেষনমূলক রীট), ৪. Writ of Habeas Corpus (বন্দী প্রদর্শন রীট) এবং ৫. Writ of Quo-Warranto" (কারণ দর্শাও রীট)। রীট জারী করার ক্ষমতা একমাত্র মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ এবং ভারতের ২২৬-এ অনুচ্ছেদে উক্ত বিষয়ে বর্নিত রয়েছে। উপরোক্ত ১-৩ নং রীট সংক্ষুব্ধ ব্যাক্তি এবং ৩--৫ নং রীট যে কোন ব্যক্তি দায়ের করতে পারেন।অন্যদিকে জনস্বার্থে মামলা বলতে বুঝায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ছাড়াও সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অনুপ্রানিত হয়ে দেশের যে কোন নাগরিক সৎ উদ্দেশ্যে দেশের জনগনের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে ও জনগনের পক্ষে দায়ের কৃত কোন মামলা। বিচারপতি (অবঃ) মিঃ মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানীর মতে জনস্বার্থ মামলাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়; ১. জনগুরুত্ব সম্পর্কীয় মামলা (Public importance litigation)- যে মামলায় আবেদনকারীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকলেও সিদ্ধান্ত বহু লোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ২. বহু সংখ্যক লোকের একক স্বার্থ সম্পর্কীয় মামলা (Representative Suit or litigation)- একটি নিদিষ্ট জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা। ৩. জনস্বার্থ সম্পর্কীয় মামলা। (Public interest litigation)- দেশের সকল মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা। সংবিধানের ২৬-৪৪ অনুচ্ছেদে বর্নিত জনগনের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে প্রতিকার প্রার্থনা করা যায়। তাছাড়া দেওয়ানী কার্যবিধির ধারা ৯১,৯২, ১ আদেশের ৮ বিধি ও ৩২ আদেশ অনুয়ায়ী জনস্বার্থ মূলক মামলা করা যায়। তবে এক্ষেত্রে মাননীয় এটর্নি জেনারেল এর পূর্ব অনুমতি নিতে হয়। অন্যদিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩৩ ধারা অনুযায়ী জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিজ্ঞ ম্যজিস্ট্রেট আদালতেও প্রতিকার প্রার্থনা করা যায়। এক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সহ জনস্বার্থে যে কেউ আবেদন করতে পারে।মূল কথায় আসা যাক, কমন আইন ব্যবস্থায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদন ছাড়া "কমন আইন ভূক্ত দেশের মাননীয় বিচারকগন Mandamus (ম্যান্ডামাস), Prohibition (প্রহিবিশন) ও certiorari (সার্শিওরারাই) রীট আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত রক্ষনশীল ছিলেন। যদিও সময়ের সাথে সাথে তাঁদের এ রক্ষনশীলতা পর্যায়ক্রমে অনেক ক্ষেত্রে শিথিল হয়েছে। বর্তমানে ভারতের সংবিধানে রীট এখতিয়ারের ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ ২২৬(এ) যদিও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ছাড়াও অন্যের আবেদনের সুযোগ রয়েছে কিন্ত ১৯৭০' র দশকের আগ পর্যন্ত সেদেশের মাননীয় বিচারকগন Mandamus (ম্যান্ডামাস), prohibition (প্রহিবিশন) ও certiorari (সার্শিওরারাই) রীট সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদন ছাড়া আমলে নিতেন না। কিন্ত এমন অনেক বিষয় থাকে যেখানে সাধারন জনগন সরাসরি সংক্ষুব্ধ হলেও মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে মাননীয় আদালতে আসতে পারেননা বা আসার সাহস পাননা।তাই তাদের অধিকার বাস্তবায়নে জনস্বার্থে মামলা দায়েরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালে "ব্রাউন বনাম বোর্ড অব এডুকেশন"[ (১৯৫৪) ৩৪৭ ইউ এস ৪৮৩] মামলার মাধ্যমে আমেরিকায় জনস্বার্থ মূলক মামলার প্রথম সূচনা হয়।ঐ মামলায় মামনীয় আদালত মামলা আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষনশীল মনোভাব থেকে উদার মনোভাব পোষন করেন এবং ঐ মামলায় শিক্ষা, চাকুরী এবং আবাসনের ক্ষেত্রে বর্নবাদী বৈযম্য নিষিদ্ধ করা হয়।পরবর্তীতে ১৯৬০ ও ৭০'র দশকে যুক্তরাষ্ট্রে জনস্বার্থ মূলক মামলা প্রতিষ্ঠানিক রুপ পেতে শুরু করে।যুক্তরাষ্ট্রের এ অগ্রযাত্রায় অনুপ্রানিত হয়ে সাধারন মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভারতের সুপ্রীমকোর্ট জনস্বার্থ মূলক মামলাকে একটি কার্যকরী পন্থা হিসেবে ব্যবহার করেন এবং "এস. পি.গুপ্তা বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া" (এ. আই. আর ১৯৮২ এস. সি ১৪৯) মামলার মাধ্যমে ভারতে জনস্বার্থ মূলক মামলার প্রথম সুচনা হয়। উক্ত মামলায় হাইকোর্টের বিচারকের সংখ্যা এবং একজন অতিরিক্ত বিচারকের চাকুরি নিশ্চিত সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে একদল আইনজীবীর আনা আবেদনকে আদালত জনস্বার্থমূলক মামলা হিসেবে আমলে নেন। অতঃপর "বেনজির ভুট্টো বনাম ফেডারেশন অব পাকিস্তান" (পি. এল. ডি ১৯৮৮এস. সি ৪১৬) মামলার মাধ্যমে পাকিস্তানে জনস্বার্থ মূলক মামলার অগ্রযাত্রা শুরু হয়। উক্ত মামলায় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট এ অভিমত প্রকাশ করেনযে,"প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করার জন্য জীবন যাপনের পর্যাপ্ত মান অপরিহার্য,আইনের শাসনকে অবশ্যই এমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আবহ সৃষ্টি করতে হবে যা মর্যদা ও আকাঙ্খাসহ বেঁচে থাকতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে"।অতঃপর "কাজী মুখলেসুর রহমান বনাম বাংলাদেশ" [২৬ ডি. এল. আর (এ,ডি)) ৪৪] মামলার মাধ্যমে বাংলাদেশ জনস্বার্থ মূলক মামলার সূচনা হয়।এ মামলায় ভারত- বাংলাদেশ সীমান্তরেখা পূনঃনির্ধারনকারী একটি চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা হলে অসমোয়চিত (premature) বলে খারিজ হলেও উক্ত মামলায় মহমান্য সুপ্রীমকোর্ট কর্তৃক আবেদনকারীর লোকাস স্ট্যান্ডাই স্বীকৃত হয়।পরবর্তীতে জনস্বার্থে বাংলাদেশ "সংবাদপত্র পরিষদ বনাম বাংলাদেশ" [১২ বি. এল. ডি (এডি) ১৫৩] মামলায় লোকাস স্ট্যান্ডাই এর অভাবে খারিজ হলেও "রিটায়ার্ড গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশান বনাম বাংলাদেশ" (৪৬ ডি. এল. আর (এইচ,সি,ডি) ৪২৬] মামলায় মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ আবেদনকারীর লোকাস স্ট্যান্ডাই রয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। কিন্তু "লোকাস স্ট্যান্ডাই" নিয়ে তখনও বিরোধের মীমাংসা হয়নি।অতঃপর "ড. মহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ" [১৭ বি. এল.ডি (এডি) ১] মামলায় সুপ্রীম কোর্ট এ মর্মে রায় প্রদান করেন যে; "কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কথাটি কেবলমাত্র ব্যক্তিগতভাবে অর্থাৎ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বুঝায় না, বরং এটা জনসাধারন পর্যাপ্ত বিস্তৃত, অর্থাৎ সমষ্টিগত ও জোটবদ্ধ ব্যক্তিত্বকেও বুঝায়।যদি কোন আবেদনকারী সৎ উদ্দেশ্যে ও জনস্বার্থে জনগনের কোন দাবী উত্থাপন করেন, তাহলে তিনি আদালত কর্তৃক তার শুনানি গ্রহনের যোগ্যতা অর্জন করেন" অর্থাৎ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বলতে কেবল মাত্র যে ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাকেই বুঝায় না, বরং "এমন কোন ব্যক্তিকেও বুঝায় যে অন্য কোনো মানুষের প্রতি কোনো সরকারি বা স্হানীয় কর্তৃপক্ষকের অন্যায়ের ফলে তার নিজের হৃদয়ে রক্তক্ষরন অনুভব করে" মূলত এ মামলার মাধ্যমে আমাদের দেশে জনস্বার্থমূলক মামলার দ্বার উন্মুক্ত হয়।পরবর্তীতে,বিনা বিচারে একটি শিশু বার বছর ধরে আটক থাকার বিরুদ্ধে রীট "রাস্ট্র বনাম জেলা, প্রশাসক সাতক্ষীরা"[৪৫ ডি. এল. আর(এইচ,সি,ডি) ৬৪৩] ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৫৪ ও ১৬৭ র অপব্যবহারের বিরুদ্ধে রীট " ব্লাস্ট, আইন শালিশ কেন্দ্র এবং অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ ( রীট আবেদন নং ৩৮০৬ /১৯৯৮),কারাগারে নির্বিচারে ডান্ডাবেড়ী ব্যবহারের বিরুদ্ধে রীট "সালমা সোবহান বনাম বাংলাদেশ[(রীট পিটিশন নং ২৬৭৮/১৯৯৫, ২৮৫২/১৯৯৭, "আইন ও সালিশকেন্দ্র বনাম বাংলাদেশ'(রীট পিটিশন নং ৩৪২১/২০০১)]।বস্তি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে রীট "আইন ও সালিশ কেন্দ্র বনাম বাংলাদেশ" [১৯ বি. এল. ডি (এইচ,সি,ডি) ৪৮৯] যৌন কর্মী উচ্ছেদের বিরুদ্ধে রীট "সাইফুল ইসলাম দিলদার বনাম বাংলাদেশ" [ ৫০ ডি. এল. আর (এইচ,সি,ডি)৩১৮]।উটের জকি হিসেবে বাংলাদেশের শিশুদের পাচারের বিষয়ে রীট " ঈসা নিবরাস ফারুক বনাম বাংলাদেশ"( রীট নং ২৭৮/১৯৯৩),গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে রীট "সালমা সোবহান বনাম বাংলাদেশ" ( রীট পিটিশন নং ৬০৭০/১৯৯৭), শিশুদের প্রানহানীকর প্যারাসিটামল সিরাপ নিষিদ্ধকরন সংক্রান্ত রীট "সৈয়দ বোরহান করীব বনাম বাংলাদেশ" ( রীট পিটিশন নং ৭০১/১৯৯৩), তেজস্ক্রিয় দুধ সংক্রান্ত রিট "ড. মহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ" [৪৮ ডি. এল. আর (এইচ.সি. ডি) ৪৩৮],লঞ্চ দূর্ঘটনা সংক্রান্ত রীট "কনজ্যুমার এসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ বনাম বাংলাদেশ" ( রীট আবেদন নং ১৬৯১/২০০১), ত্রয়োদশ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে রীট " সৈয়দ মোহাম্মদ মশিউর রহমান বনাম বাংলাদেশের রাস্ট্রপতি" [১৭ বি. এল.ডি (এইচ. সি. ডি) ৫৫],বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে রীট, "আবু বকর সিদ্দিক বনাম বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ" [১৭ বি,এল,ডি (এইচ. সি. ডি) ৩১] সহ আরো অনেক রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে জনস্বার্থ মূলক মামলার প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পায়। আমি মনে করি বর্তমানে বাংলাদেশে জনস্বার্থ মূলক মামলার স্বর্নযুগ চলছে এবং মাননীয় আদালতও উল্লেখ সংখ্যক মামলায় প্রশংসনীয় আদেশ প্রদান করেছেন এবং এখনও করছেন। এমনকি স্ব-প্রনোদিত হয়েও মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ জনস্বার্থে প্রয়োজনী আদেশ প্রদান করছেন।নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার অপব্যবহার,সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শ্রেনীর অধিকার আদায়, পরিবেশ গত অধিকার আদায়, ভোক্তা অধিকার আদায় সহ অন্যান্য বিষয় জনস্বার্থ মূলক মামলা বিষয়বস্তু হতে পারে। সর্বশেষ ন্যশনাল বোর্ড অফ রেভিনিউ বনাম আবু সায়েদ খান মামলায় [১৮ বি,এল,সি (এডি) ১১৭] বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের মাননীয় আপীল বিভাগ জনস্বার্থ মামলার বিষয়বস্ত নির্ধারন করে দিয়েছেন এবং সাথে সাথে এও নির্দেশনা দিয়েছেন, জনস্বার্থ মুলক মামলা যেন "পাবলিসিটি ইন্টারেস্ট" বা "পার্সোনাল ইন্টারেস্ট না হয়"। কোন ব্যক্তির আবেদন ক্রমে মাননীয় আদালত মামলা আমলে নিতে পারেন। অন্যদিকে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়, এমন কোন বিষয় মাননীয় আদালতের নজরে আসলে স্ব-প্রনোদিত(Suo moto rule) রুল জারী করা সহ প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারেন। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হল রাস্ট্র বনাম জিল্লুর রহমান[১৯ বি,এল,ডি (এইচ,সি,ডি) ৩০৩] মামলাটি। এর পরবর্তীতে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ একাধিক বিষয়ে স্ব-প্রনোদিত হয়ে আদেশ প্রদান করেছেন। সম্প্রতি ভারতে বন্ধী ৭২ শিশুকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে , জেলখানায় বিনা বিচারে আটক থাকা বন্দীদের মুক্তির লক্ষ্যে,মোবাইল কোর্ট কর্তৃক বেআইনি ভাবে শিশুদের সাজা প্রদানের বিরুদ্ধে , ঢাকায় রাতে দুটি শিশুকে বাসায় ফিরার লক্ষ্যে, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ৪(চার) টি শিশু ধর্ষন মামলার আসামী হওয়ার ঘটনা, সিলেটে ও নোয়াখালীর ভিন্ন ভিন্ন নারী নির্যাতনের ঘটনা,কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস,এম,তানভীর আরাফাত কর্তৃক একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের সহিত দূর্ব্যবহারের ঘটনা সহ একাধিক বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগ স্ব- প্রনোদিত হয়ে ভিন ভিন্ন রুল জারী করেছেন।এছাড়াও মাননীয় আদালতের বার্তা প্রসুত এখতিয়ার রয়েছে।"সুনীল বাটরা বনাম দিল্লি প্রসাশন" [এ,আই,আর১৯৮০ (এস,সি)১৫৭৯] মামলার মাধ্যমে ভারতে এর সূচনা হয়।উক্ত মামলায় একজন কারাবন্দী তার সহবন্দীর ওপর নির্যাতনের কথা লিখে মাননীয় আদালতকে উদ্দেশ্যে করে চিঠি লিখলে মাননীয় আদালত উক্ত চিঠি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করেন।অতঃপর ইচ্ছুদেবী বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া (এ,আই,আর১৯৮০ এস,সি ১৯৮৩) ও পিপলস ইউনিয়ন ফর ডেমোক্রেটিক রাইট্স বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া [এ,আই,আর১৯৮২ (এস,সি) ১৯৮৩]মামলা উল্লেখযোগ্য।।দর্শন মাসিহ বনাম রাস্ট্র [ পি,এল,ডি১৯৯০ (এস,সি) ৫১৩] মামলায় পাকিস্তানের আাদালত ইট ভাটার শ্রমিকদের একটি টেলিগ্রামকে আমলে নিয়েছেন। "ড. ফসটিনা বনাম পেরেরা বনাম রাস্ট্র" [৫৩ ডি,এল,আর (এইচ,সি,ডি) ৪১৪] মামলার মাধ্যমে বাংলাদেশ এর সূচনা হয়। ২৯ জন বিদেশী নাগরিকের সাজা শেষ হওয়ার পরও কারাগারে আটক রাখার বিষয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতির নিকট প্রেরিত চিঠি আমলে নিয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করেন। ইতিমধ্যে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত এক আসামীর চিঠিকেও মাননীয় আপীল বিভাগ আমলে নিয়েছেন। পরিশেষে বলা যায় বিচার বিভাগের হাতেই মুলতঃ জনস্বার্থ মুলক মামলার ভবিষ্যত ন্যস্ত।অন্তর্নিহিত সুবিবেচনার ক্ষমতার সাথে প্রায়োগিক সর্তকতার সমন্বয়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগ এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা পালন করতে পারে এবং বর্তমানে করছেনও যা খুবই প্রশংসার দাবীদার।অন্যদিকে জনস্বার্থে ভূমিকা রাখা আইনজীবীর উপরও বর্তায় এবং অনেক আইনজীবী সে লক্ষ্যে নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বটে। আমি নিজেও একাধিক জনস্বার্থ মামলার (রীট পিটিশনের) দরখাস্তকারী ও আইনজীবী হিসেবে সম্পৃক্ত রয়েছি।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেলখানায় ডাক্তার নিয়োগ, সরকার কর্তৃক ঔষধের মূল্যে নির্ধারন,মানহীন ফিল্টার ও মিনারেল পানি বাজারজাত বন্ধকরন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সেশন চার্জ বন্ধকরন,অনিবন্ধিত মোবাইল সীম বন্ধ করন, অনুমোদন ছাড়া ডাক্তার পদবী ব্যবহার বন্ধকরন, আইন মোতাবেক প্রাইভেট হসপিটাল প্রতিষ্ঠাকরন ইত্যাদি উল্লেখ যোগাযোগ্য এবং অনেক ক্ষেত্রে মাননীয় আদালত কাঙ্খিত আদেশ প্রদান করেছেন। তবে এটাও মনে রাখা উচিৎ জনস্বার্থে কোন কাজ যেন কোন ব্যাক্তির পাবলিসিটি, ইন্টারেস্ট বা পার্সোনাল ইন্টারেস্ট না হয়। মানুষের কল্যানই জনস্বার্থ মামলার মূল উদ্দেশ্য হতে হবে। [লেখকঃ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট] |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ অঞ্জন কর
প্রকাশকঃ জেরীফ আফতাব কর্তৃক
জেড টাওয়ার (৬ষ্ট তলা), বাড়ী- ০৪, রোড-১৩২, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২ থেকে প্রকাশিত
ইমেইলঃ tribunenewsbd@gmail.com
© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || tribunenewsbd.com