বৃহস্পতিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৩
● পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল উদ্বোধন      ● সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে      ● বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে হাতিরঝিল থেকে পানি নিচ্ছে হেলিকপ্টার      ● বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের খোঁজখবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী      ● বঙ্গবাজারে ফায়ার সার্ভিসের ৫০ ইউনিট, ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন      ● ৫ ঘণ্টায়ও নেভেনি বঙ্গবাজারের আগুন      ● ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে হামলা, টিয়ারশেল নিক্ষেপ      ● আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের সাথে নৌ-সেনা ও বিমানবাহিনী      ● বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড: আশপাশের ৪ ভবনে ছড়িয়েছে আগুন      ● জ্বলছে বঙ্গবাজার : প্রতিনিয়ত বাড়ছে আগুনের তীব্রতা     
লোডশেডিং এর জন্য সবসময় কর্তৃপক্ষ দায়ি নয়
লোডশেডিং কেন হয়?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২২ , বুধবার ০২ : ০৭ পিএম   প্রদর্শিত হয়েছে ৪০১ বার

আপনার জীবনটাকে যতটা সহজ করেছে তা অন্য কোন প্রযুক্তি করতে পারেনি। বরং অধিকাংশ প্রযুক্তি এই বিদ্যুৎ এর উপর নির্ভরশীল। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিদ্যুতের একটি বিড়ম্বনা হল লোডশেডিং। লোডশেডিং হলে আমরা বিদ্যুৎ বিভাগ বা সরকারের উপর ভীষণ বিরক্ত হই। তবে সত্যি কথা বলতে লোডশেডিং এর জন্য সবসময় কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করা যায়না।


মাঝে মাঝে সমগ্র বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই লোডশেডিং করতে হয়। লোডশেডিং জনজীবনে দুর্ভোগ নিয়ে আসতেও জাতীয় স্বার্থে তা বেশ উপকারী। আমরা অনেকেই হয়ত ভাবছি লোডশেডিং কিভাবে উপকারী হতে পারে।


লোডশেডিং কেন হয় এবং কিভাবে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে সে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক: 


লোডশেডিং হবার অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় যদি উৎপাদন কম হয়। অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় চাহিদার তুলনায় অধিক উৎপাদন কম হয় তখন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখতে এই বাড়তি চাহিদাকে লোডশেডিং এর মাধ্যমে উৎপাদনের সাথে সমন্বয় করা হয়। এই সমন্বয় সাধনের কাজটি না করলে সমগ্র বিদ্যুৎ গ্রিড এ ব্ল্যাকআউটের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।


ধরুন এখন বিদ্যুতের চাহিদা বা লোড হল 7 হাজার megawatt ।এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে 7 হাজার megawatt । বিদ্যুতের frequency হবে 50 হার্জ। এটা হল বিদ্যুৎ সরবরাহের স্বাভাবিক অবস্থা।


কিন্তু এখন যদি আপনার বাসার টিভি, ফ্যান বা এসি বন্ধ করে দেন তাহলে লোড কিছুটা কমে যাবে। এরকম ভাবে আপনার প্রতিবেশী সহ অনেকেই হঠাৎ করে বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে দিল।


তখন দেখা গেল যে মাত্র অল্প সময়ের ব্যবধানে লোড হয়ে গেল সাড়ে 6 হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু বিদুৎ এখনো উৎপাদন হচ্ছে 7000 মেগাওয়াট। তাহলে 500 মেগাওয়াট বিদ্যুত সম্পূর্ণ বৃথা যাবে। এই অবস্থায় বিদ্যুতের ফ্রিকোয়েন্সি হবেন 50.7 হার্জ।


ফ্রিকোয়েন্সি যদি 50 হাজারের বেশি হয় তার মানে বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জমা করে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রচুর জ্বালানি এবং অর্থ খরচ হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে অনেক সম্পদের অপচয় হয়। সেজন্য কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ করে দেয়।


মনে করুন উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে সাড়ে 6 হাজার মেগাওয়াট করা হলো। এখন বিদ্যুৎ এর ফ্রিকোয়েন্সি আবার ও 50 হার্জ হয়ে যাবে। তার মানে এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় আসলো।


কিছুক্ষণ পরে আবার এর উল্টো চিত্র ঘটে হয়তো কোন কারখানা এতক্ষণ বন্ধ ছিল সেই কারখানা চালু করা হলো।তার ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে হয়ে গেল সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট। তখন বিদ্যুতের ফ্রিকোয়েন্সি হয়ে যাবে 49.2 হার্জ। ফ্রিকোয়েন্সি যদি 50 এর নিচে নামে তার মানে বুঝতে হবে এই মুহূর্তে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।


এখন হয়তো বলতে পারেন তাহলে বন্ধ করা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আবার চালু করে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু না এখানেই হলো বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মূল সমস্যা।


ইচ্ছে করলে কোন পাওয়ার প্ল্যান্ট মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ করা যায়। কিন্তু চাইলেই নিমিষের মধ্যে পাওয়ার প্লান্ট আবার চালু করা সম্ভব নয়। এক একটি বড় পাওয়ার প্লান্ট চালু করতে কমপক্ষে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগে। কিন্তু এই এক ঘন্টায় বিদ্যুতের চাহিদা অনেক ওঠানামা করবে।এমনকি প্রতি সেকেন্ডে এই চাহিদার পরিবর্তন হচ্ছে। তাই কখন বিদ্যুৎ বেশি লাগবে আর কখন কম লাগবে তা আগে থেকে ধারণা করা মুশকিল।


বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতেন নতুন পাওয়ার প্লান্ট চালু করার আগ পর্যন্ত যদি চাহিদা আরো বেড়ে যায় এবং ফ্রিকোয়েন্সি পঞ্চাশের নিচে নামতে থাকে তাহলে এক বিশাল ঝুঁকি তৈরি হয়।


ফ্রিকোয়েন্সি কমতে কমতে যদি ৪৮.৬ এর নিচে নেমে যায় তাহলে সমগ্র দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো একযোগে বন্ধ হয়ে যাবে।কোনো কোনোটি বোমার মত বিস্ফোরিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পাওয়ার প্লান্ট গুলো স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।


এরকম ভাবে দেশের সবগুলো পাওয়ার প্লান্ট নষ্ট হয়ে গেলে তা ঠিক করতে দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।কম ফ্রিকোয়েন্সির জন্য সকল পাওয়ার প্লান্ট যদি স্থায়ীভাবে নষ্ট না হয়ে শুধু বন্ধ হয়ে যায় তাহলে অনেক বড় বিপদ।


এই অবস্থাকে বলা হয় ব্ল্যাকআউট। তার মানে পুরো দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া। ব্ল্যাক আউট হলেও সারা দেশের বিদ্যুত্ সংযোগ পুনরায় চালু করতে 16 ঘণ্টা থেকে 1 দিন পর্যন্ত সময় লাগে পারে।


২০১৪ সালে বাংলাদেশের ব্ল্যাকআউটের মতো ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছিল। সে বছর নভেম্বর ১১ তারিখ সকাল ১১.৩০ থেকে নভেম্বরের ২ তারিখ মধ্যরাত পর্যন্ত সারা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।


এই বিপর্যয় বিশ্বের অনেক বড় ও ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় গুলোর মধ্যে অন্যতম। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানোর জন্যই মূলত লোডশেডিং করা হয়।


ধরুন এখন বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে 7 হাজার megawatt। উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে 6 হাজার megawatt। এখন নতুন পাওয়ার প্লান্ট চালু হবার আগ পর্যন্ত বাড়তি যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই কোনো না কোনোভাবে বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে ফেলতে হবে। তখন কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে কোন কোন এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এটাই আমরা বলি লোডশেডিং।


এরকম পরিস্থিতিতে সাধারণত কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে লোডশেডিং করা হয়। এর ফলে দেশের সামগ্রিক চাহিদা মাত্রা অনেকটা কমে আসে। নির্ধারিত অঞ্চল ২০০-৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার কমিয়ে দেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ভারসাম্য আনা হয়।


সেদিন বিবেচনায় লোডশেডিংয়ের সাধারন মানুষের অনেক ভোগান্তি হলেও দেশের মূল্যবান বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো যায়।তাই লোডশেডিং জাতীয় স্বার্থে একটি জরুরী পদক্ষেপ।


তবে এর বাইরে আরেক ধরনের লোডশেডিং হয়। একে বলা হয় সিডিউল লোডশেডিং। অনেক সময় বিভিন্ন গ্রীড বা সাবস্টেশন কে অনেক আগে থেকেই একটি নির্দিষ্ট পরিমান বিদুৎ বরাদ্দ দেয়া থাকে। সেই বরাদ্দ যদি চাহিদার তুলনায় অনেক কম হয় তখন অল্প বিদ্যুৎ দিয়ে কোন এলাকার সরবরাহ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত লোডশেডিং করতে হয়। সিডিউল লোডশেডিং জনগণের জন্য খুবই ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


« পূর্ববর্তী সংবাদ পরবর্তী সংবাদ »





  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ অঞ্জন কর

প্রকাশকঃ জেরীফ আফতাব কর্তৃক

জেড টাওয়ার (৬ষ্ট তলা), বাড়ী- ০৪, রোড-১৩২, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২ থেকে প্রকাশিত

ইমেইলঃ tribunenewsbd@gmail.com

© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || tribunenewsbd.com