শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
● পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল উদ্বোধন      ● সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে      ● বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে হাতিরঝিল থেকে পানি নিচ্ছে হেলিকপ্টার      ● বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের খোঁজখবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী      ● বঙ্গবাজারে ফায়ার সার্ভিসের ৫০ ইউনিট, ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন      ● ৫ ঘণ্টায়ও নেভেনি বঙ্গবাজারের আগুন      ● ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে হামলা, টিয়ারশেল নিক্ষেপ      ● আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের সাথে নৌ-সেনা ও বিমানবাহিনী      ● বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড: আশপাশের ৪ ভবনে ছড়িয়েছে আগুন      ● জ্বলছে বঙ্গবাজার : প্রতিনিয়ত বাড়ছে আগুনের তীব্রতা     
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা কে, কোথায়?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২২ , সোমবার ১২ : ০৮ পিএম   প্রদর্শিত হয়েছে ৬৫৫ বার

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনিদের আরও পাঁচজন পলাতক আছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে অবস্থান করছে রাশেদ চৌধুরী এবং কানাডায় কোনও স্ট্যাটাস ছাড়াই অবস্থান করছে নূর চৌধুরী। এছাড়া শরিফুল হক ডালিম, খন্দকার আব্দুর রশিদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন কোথায় আছে জানে না সরকার।


রাশেদ চৌধুরী:

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরী ১৯৯৬ সালে ব্রাজিল থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যায়। সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলে ২০০৪ সালে এটি মঞ্জুর হয়। এরপর মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এর বিরুদ্ধে আপিল করে। দুই বছর আইনি লড়াইয়ের পরে ২০০৬ সালেও রাশেদ চৌধুরীর পক্ষে রায় দেওয়া হয়।


২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত চেয়ে অন্তত পাঁচবার আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করে বাংলাদেশ। এরপর ২০১৮ ও ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুবার চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।


বছর দুয়েক আগে রাশেদ চৌধুরীর আশ্রয় মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। এতে খুনি রাশেদকে ফেরানো নিয়ে আশার আলো দেখা দেয়। তবে বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশেদকে ফেরানোর বিষয়ে সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। বাইডেন প্রশাসনের পাশাপাশি মার্কিন বিচার বিভাগ তথা অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে ঢাকার পক্ষ থেকে। তবে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।


রাশেদ চৌধুরী প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, বাইডেন সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেস্টের সঙ্গে আমি নিজে আলাপ করেছি। তারা খালি বাহানা দেয়। তাকে ফেরতের কথা বললে বলে, এটা অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস দেখে। অ্যাটর্নি জেনারেলের সাক্ষাৎ চাইলাম আমরা। তিনি বললেন, যেহেতু কেস আছে তাই আমরা ইন্টারেস্টেড পার্টির সঙ্গে সাক্ষাৎ করব না। যত ধরনের ‘ওয়াল’ তৈরি করা যায় তারা সেটা করছে।


নূর চৌধুরী:

কানাডাতে অবস্থান করছে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি নূর চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নূরকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে একবার এবং ২০০৭ সালে আরেকবার নূরকে দেশে ফেরত পাঠাতে চায় কানাডা। কিন্তু তখন ক্ষমতায় থাকা বিএনপি-জামায়াত সরকার বিষয়টি নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে নূরকে ফের ফেরত চায় কানাডার কাছে।


এরই মধ্যে কানাডা থেকে বহিষ্কার এড়াতে নূর চৌধুরী সে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে প্রি-রিমুভ্যাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট (প্রাক-অপসারণ ঝুঁকি মূল্যায়ন) আবেদন করেন। সেখানে নূর উল্লেখ করেন, ‘কানাডা থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হলে তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে।’ এ ধরনের আবেদন সাধারণত এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়। কিন্তু নূর চৌধুরীর ক্ষেত্রে কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেল ১১ বছরেও সেটি নিষ্পত্তি করেননি।


বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালের জুলাইয়ে কানাডার ফেডারেল কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় নূর চৌধুরীর অবস্থান সংক্রান্ত তথ্যের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আবেদন করা হয়। পরের বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কোর্ট বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয়। অর্থাৎ নূর চৌধুরীর অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য জানানোর জন্য কানাডা সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে কানাডার সরকার এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় আসা কানাডার নতুন হাইকমিশনার লিলি নিকোলস চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ড. মোমেনের সাক্ষাতে এলে তিনি হাইকমিশনারকে খুনি নূরকে ফেরত আনার বিষয়ে তার সরকারের সহযোগিতা চান। জবাবে হাইকমিশনার জানিয়েছিলেন, বিষয়টি তিনি কানাডা সরকারকে অবহিত করবেন।


খন্দকার আব্দুর রশিদ:

বঙ্গবন্ধুর অন্যতম এই খুনি অন্য কোনও দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করছে বলে ধারণা করা হয়। কারণ বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করলে রিনিউ করার জন্য তাকে আবেদন করতে হতো। ধারণা করা হয় রশিদ পাকিস্তান বা আফ্রিকার কোনও দেশে পালিয়ে আসে তবে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।


শরিফুল হক ডালিম:

বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি ডালিমও ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করছে বলে ধারণা করা হয়। ১৯৯৫ সালে কেনিয়াতে রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন অবস্থায় অবসরে যায় ডালিম। বর্তমানে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত নয় সরকার। সে পাকিস্তান, লিবিয়া বা স্পেনে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হলেও এ বিষয়ে নিশ্চিত নয় সরকার।


মোসলেম উদ্দিন খান:

বঙ্গবন্ধুর এই খুনি ইউরোপের কোন একটি দেশে পালিয়ে আছে বলে ধারণা করা হলেও এই সম্পর্কে নিশ্চিত কোনও তথ্য নেই সরকারের হাতে। তবে করোনা মহামারির মধ্যে গত বছরের জুন মাসে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা বঙ্গবন্ধুর এ খুনি ভারতে আটক হওয়ার খবর ছাপে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি।


বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরানোর অগ্রগতির ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ২০১০ সাল থেকে এটা নিয়ে আমরা কথা বলছি। দুজনের কথা আমরা জানি। বাকিদের কথা আমরা জানি না। আমাদের পুলিশও কিছু জানে না। এটা খুব দুঃখজনক। আমরা ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়েছি। টাকা ডিক্লেয়ার করেছি। কেউ যদি সঠিক তথ্য দিতে পারে তাহলে তাকে আমরা পুরস্কৃত করব বলেছি। তারপরও তিনজনের খবর আমরা জানি না। যে দুজনের খবর আমরা পেয়েছি তারা উন্নত দেশে থাকে। সেখানে তারা দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে।


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের ১৮ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরবর্তীতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।


২০২০ সালের ১১ এপ্রিল খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসিও কার্যকর করা হয়। তাকে ভারত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২৪ বছর তিনি ভারতের কলকাতায় লুকিয়ে ছিলেন। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১২ খুনির একজন আজিজ পাশা ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান।


ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে প্রথমবারের মতো ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৯৮ সালে এ মামলার বিচারে হত্যার দায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ২০০০ সালে হাইকোর্ট ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। ২০০৯ সালে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখলে আসামিরা রিভিউ আপিল করেন।


২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রিভিউ আপিল খারিজ করা হয় এবং পরদিন ২৮ জানুয়ারি পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তারা হলেন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি)।


এর ১০ বছর পর ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসিও কার্যকর করা হয়। তাকে ভারত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২৪ বছর তিনি ভারতের কলকাতায় লুকিয়ে ছিলেন। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১২ খুনির একজন আজিজ পাশা ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান।


« পূর্ববর্তী সংবাদ পরবর্তী সংবাদ »





  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ অঞ্জন কর

প্রকাশকঃ জেরীফ আফতাব কর্তৃক

জেড টাওয়ার (৬ষ্ট তলা), বাড়ী- ০৪, রোড-১৩২, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২ থেকে প্রকাশিত

ইমেইলঃ tribunenewsbd@gmail.com

© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || tribunenewsbd.com