শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
● পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল উদ্বোধন      ● সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে      ● বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে হাতিরঝিল থেকে পানি নিচ্ছে হেলিকপ্টার      ● বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের খোঁজখবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী      ● বঙ্গবাজারে ফায়ার সার্ভিসের ৫০ ইউনিট, ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন      ● ৫ ঘণ্টায়ও নেভেনি বঙ্গবাজারের আগুন      ● ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে হামলা, টিয়ারশেল নিক্ষেপ      ● আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের সাথে নৌ-সেনা ও বিমানবাহিনী      ● বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড: আশপাশের ৪ ভবনে ছড়িয়েছে আগুন      ● জ্বলছে বঙ্গবাজার : প্রতিনিয়ত বাড়ছে আগুনের তীব্রতা     
শহীদ কাদরীর ৫ কবিতা
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২২ , মঙ্গলবার ১১ : ০৮ এএম   প্রদর্শিত হয়েছে ৫১৪ বার

বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি শহীদ কাদরী। ফাইল ছবি

মাংস, মাংস, মাংস 


আমাকে রাঙাতে পারে তেমন গোলাপ

কখনও দেখি না। তবে কাকে, কখন, কোথায়

ধরা দেবো? একমাত্র গোধূলি বেলায়

সবকিছু বীরাঙ্গনার মতন রাঙা হয়ে যায়।

শৈশবও ছিলো না লাল। তবে জানি,

দেখেছিও, ছুরির উজ্জ্বলতা থেকে ঝরে পড়ে বিন্দু বিন্দু লাল ফোঁটা


তবে হাত রাখবো ছুরির বাঁটে? সবুজ সতেজ-

রূপালি রেকাবে রাখা পানের নিপুণ কোনো খিলি নয়,

মাংস, মাংস, মাংস… মাংসের ভেতরে শুধু

দৃঢ়মুখ সার্জনের রূঢ়তম হাতের মতন

খুঁজে নিতে হবে সব জীবনের রাঙা দিনগুলি...


স্মৃতি : কৈশোরিক 


অদৃশ্য ফিতে থেকে ঝুলছে রঙিন বেলুন

রাত্রির নীলাভ আসঙ্গে আর স্বপ্নের ওপর

যেন তার নৌকা- দোলা; সোনার ঘণ্টার ধ্বনি

ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত শহরের! আমি ফিরলাম

ঝর্ণার মতো সেই গ্রীষ্ম দিনগুলোর ভেতর

যেখানে শীৎকার, মত্ততা আর বেলফুলে গাঁথা

জন্মরাত্রির উৎসবের আলো; দীর্ঘ দুপুর ভরে

অপেমান ঘোড়ার ভৌতিক পিঠের মতো রাস্তাগুলো,

গলা পিচে তরল বুদ্বুদে ছলছল নত্ররাজি,

তার ওপর কোমল পায়ের ছাপ, -চলে গেছি

শব্দহীন ঠাকুর মার ঝুলির ভেতর।


দেয়ালে ছায়ার নাচ

সোনালি মাছের। ফিরে দাঁড়ালাম সেই

গাঢ়, লাল মেঝেয়, ভয়-পাওয়া রাত্রিগুলোয়

যেখানে অসতর্ক স্পর্শে গড়িয়ে পড়লো কাঁচের

সচ্ছল আধার, আর সহোদরার কান্নাকে চিরে

শূন্যে, কয়েকটা বর্ণের ঝলক

নিঃশব্দে ফিকে হল; আমি ফিরে দাঁড়ালাম সেই

মুহূর্তটির ওপর, সেই ঠাণ্ডা করুণ মরা মেঝেয়। 


কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না 


একটি মাছের অবসান ঘটে চিকন বটিতে,

রাত্রির উঠোনে তার আঁশ জ্যোৎস্নার মতো

হেলায়-ফেলায় পড়ে থাকে

কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না,

কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না;


কবরের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রবেশ করে প্রথম বসন্তের হাওয়া,

মৃতের চোখের কোটরের মধ্যে লাল ঠোঁট নিঃশব্দে ডুবিয়ে বসে আছে

একটা সবুজ টিয়ে,

ফুটপাতে শুয়ে থাকা ন্যাংটো ভিখিরির নাভিমূলে

হীরার কৌটোর মতো টলটল করছে শিশির

এবং পাখির প্রস্রাব;

সরল গ্রাম্যজন খরগোশ শিকার করে নিপুণ ফিরে আসে

পত্নীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে, চুল্লির লাল তাপে

একটি নরম শিশু খরগোশের মাংস দেখে আহ্লাদে লাফায়

সব রাঙা ঘাস স্মৃতির বাইরে পড়ে থাকে

বৃষ্টি ফিরিয়ে আনে তার

প্রথম সহজ রঙ হেলায়-ফেলায়। 



তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা 


ভয় নেই

আমি এমন

ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী

গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে

মার্চপাস্ট করে চলে যাবে

এবং স্যালুট করবে

কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো

বন-বাদাড় ডিঙ্গিয়ে

কাঁটা-তার, ব্যারিকেড পার হয়ে, অনেক

রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে

আর্মার্ড-কারগুলো এসে দাঁড়াবে

ভায়োলিন বোঝাই করে

কেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা।

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো-

বি-৫২ আর মিগ-২১গুলো

মাথার ওপর গোঁ-গোঁ করবে

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো

চকোলেট, টফি আর লজেন্সগুলো

প্যারাট্রুপারদের মতো ঝরে পড়বে

কেবল তোমার উঠোনে প্রিয়তমা।

ভয় নেই…আমি এমন ব্যবস্থা করবো

একজন কবি কমান্ড করবেন বঙ্গোপসাগরের

সবগুলো রণতরী

এবং আসন্ন নির্বাচনে সমরমন্ত্রীর

সঙ্গে প্রতিযোগিতায়

সবগুলো গণভোট পাবেন একজন প্রেমিক,

প্রিয়তমা!

সংঘর্ষের সব সম্ভাবনা, ঠিক জেনো, শেষ

হবে যাবে-

আমি এমন ব্যবস্থা করবো, একজন গায়ক

অনায়াসে বিরোধীদলের অধিনায়ক

হয়ে যাবেন

সীমান্তের ট্রেঞ্চগুলোয়

পাহারা দেবে সারাটা বৎসর

লাল নীল সোনালি মাছি-

ভালোবাসার চোরাচালান ছাড়া সবকিছু

নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, প্রিয়তমা।

ভয় নেই আমি এমন

ব্যবস্থা করবো মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়ে বেড়ে যাবে

শিল্পোত্তীর্ণ কবিতার সংখ্যা প্রতিদিন

আমি এমন ব্যবস্থা করবো গণরোষের বদলে

গণচুম্বনের ভয়ে

হন্তারকের হাত থেকে পড়ে যাবে ছুরি,

প্রিয়তমা।

ভয় নেই,

আমি এমন ব্যবস্থা করবো

শীতের পার্কের ওপর বসন্তের সংগোপন

আক্রমণের মতো

অ্যাকর্ডিয়ান বাজাতে-

বাজাতে বিপ্লবীরা দাঁড়াবে শহরে,

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো

স্টেটব্যাংকে গিয়ে

গোলাপ

কিম্বা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার

লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে

একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান।

ভয় নেই, ভয় নেই

ভয় নেই,

আমি এমন ব্যবস্থা করবো

নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী

কেবল তোমাকেই চতুর্দিক থেকে ঘিরে-ঘিরে

নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা।



কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না 


একটি মাছের অবসান ঘটে চিকন বটিতে,

রাত্রির উঠোনে তার আঁশ জ্যোৎস্নার মতো

হেলায়-ফেলায় পড়ে থাকে

কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না,

কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না;


কবরের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রবেশ করে প্রথম বসন্তের হাওয়া,

মৃতের চোখের কোটরের মধ্যে লাল ঠোঁট নিঃশব্দে ডুবিয়ে বসে আছে

একটা সবুজ টিয়ে,

ফুটপাতে শুয়ে থাকা ন্যাংটো ভিখিরির নাভিমূলে

হীরার কৌটোর মতো টলটল করছে শিশির

এবং পাখির প্রস্রাব;

সরল গ্রাম্যজন খরগোশ শিকার করে নিপুণ ফিরে আসে

পত্নীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে, চুল্লির লাল তাপে

একটি নরম শিশু খরগোশের মাংস দেখে আহ্লাদে লাফায়

সব রাঙা ঘাস স্মৃতির বাইরে পড়ে থাকে

বৃষ্টি ফিরিয়ে আনে তার

প্রথম সহজ রঙ হেলায়-ফেলায়। 






« পূর্ববর্তী সংবাদ পরবর্তী সংবাদ »





  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ অঞ্জন কর

প্রকাশকঃ জেরীফ আফতাব কর্তৃক

জেড টাওয়ার (৬ষ্ট তলা), বাড়ী- ০৪, রোড-১৩২, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২ থেকে প্রকাশিত

ইমেইলঃ tribunenewsbd@gmail.com

© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || tribunenewsbd.com