ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে করা অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনের ১২ বছর ও চেয়ারম্যান সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদেরর ৪ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া অন্যান্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার (১২ মে) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করবেন। রায়ে রফিকুল আমীনকে ২ হাজার কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

মামলায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনসহ আসামি ৪৬ জন। তাদের মধ্যে জামিনে রয়েছেন লে. কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলম, লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ, মিসেস জেসমিন আক্তার (মিলন), জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল। কারাগারে আছেন এমডি রফিকুল আমীন ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন। এদিন জামিনে থাকা এবং কারাগারে থাকা আসামিরা আদালতে হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া এ মামলায় পলাতক রয়েছে ৩৯ আসামি। পলাতক আসামিরা হলেন- ডেসটিনির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, ফারাহ দীবা, সাঈদ-উর-রহমান, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, জমশেদ আরা চৌধুরী, ইরফান আহমেদ, শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, এসএম আহসানুল কবির, জুবায়ের হোসেন, মোসাদ্দেক আলী খান, আবদুল মান্নান, আবুল কালাম আজাদ, আজাদ রহমান, মো. আকবর হোসেন সুমন, মো. সুমন আলী খান, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মো. মজিবুর রহমান, ড. এম হায়দারুজ্জামান, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, কাজী মো. ফজলুল করিম, মোল্লা আল আমীন, মো. শফিউল ইসলাম, ওমর ফারুক, সিকদার কবিরুল ইসলাম, মো. ফিরোজ আলম, সুনীল বরণ কর্মকার ওরফে এসবি কর্মকার, ফরিদ আকতার, এস সহিদুজ্জামান চয়ন, আবদুর রহমান তপন, মেজর (অব.) সাকিবুজ্জামান খান, এসএম আহসানুল কবির (বিপ্লব), এএইচএম আতাউর রহমান রেজা, গোলাম কিবরিয়া মিল্টন, মো. আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. শফিকুল হক। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ সাজা পরোয়ানা ইস্যু করেন আদালত। এর আগে গত ২৭ মার্চ দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য এদিন ধার্য করেন আদালত।

২০১৪ সালের ৪ মে দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার গ্রাহকদের চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগে ডেসটিনির ৫১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে করা মামলায় আসামি ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন প্রোগ্রামের বিরুদ্ধে করা মামলায় আসামি ১৯ জন। ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিনসহ ১৪ জনের নাম দুই মামলায় থাকায় মোট আসামি ৫১ জন। তাদের মধ্যে রফিকুল আমীন, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলম কারাগারে আটক আছেন। অপরদিকে জামিনে আছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ, জেসমিন আক্তার, জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল। বাকি ৪৪ জন আসামি পলাতক রয়েছে।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রোজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।

২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ মামলায় ৩০৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত।