সৈয়দ শামসুল হকের ৫ কবিতা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ:
২৮
সেপ্টেম্বর
২০২২ ,
বুধবার
০১ : ০৯ পিএম প্রদর্শিত হয়েছে ৮০৭৪ বার
|
১. একুশের কবিতা - সৈয়দ শামসুল হক---সংকলিত (সৈয়দ শামসুল হক) সভ্যতার মণিবন্ধে সময়ের ঘড়ি শিশুর জন্ম থেকে জরাদেহ ক্ষীণশ্বাস মানবের অবলুপ্তির সীমারেখায় বলে গেল সেই কথা। সেই কথা বলে গেল অনর্গল– তপ্তশ্বাস হাহুতাশ পাতাঝরা বিদীর্ণ বৈশাখীর জ্বালাকর দিগন্তে আষাঢ়ের পুঞ্জীভূত কালো মেঘ আসবেই ঠিক। সাগরের লোনাজলে স্নিগ্ধ মাটীর দ্বীপ শ্যামলী স্বপ্নের গান বুকে পুষে নবীন সূর্য্যেরে তার দৃঢ় অঙ্গীকার জানাবেই। সংখ্যাহীন প্রতিবাদ ঢেউয়েরা আসুক, তুমি স্থির থেকো। প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝাবাত অবহেলা করি সঞ্চয় করে যাও মুঠো মুঠো গৈরিক মাটী: সবুজ গন্ধবাহী সোনালী সূর্য্যের দিশা অকস্মাৎ উদ্ভাসিত কোরে দেবে তোমার চলার পথ। সভ্যতার মণিবন্ধে সময়ের ঘড়ি শিশুর জন্ম থেকে জরাদেহ ক্ষীণশ্বাস মানবের অবলুপ্তির সীমারেখায় বলে গেল সেই কথা। সেই কথা বলে গেল অনর্গল– পৃথিবীর জিজীবিষু আত্মার আছে। ঘনীভূত জনতার হৃদয়ে হৃদয়ে উজ্জ্বল শিখা সেই অমর সংবাদে ঢেউ তুলে দিয়ে গেল।। ২. কিছু শব্দ উড়ে যায় - সৈয়দ শামসুল হক---সংকলিত (সৈয়দ শামসুল হক) কিছু শব্দ উড়ে যায়, কিছু শব্দ ডানা মুড়ে থাকে, তরল পারার মতো কিছু শব্দ গলে পড়ে যায়। এমন সে কোন শব্দ নক্ষত্রের মতো ফুটে থাকে_ তুমি কি দেখেছো তাকে হৃদয়েশ্বরের আয়নায়? দ্যাখোনি যখন কালো অন্ধকার উঠে আসে_ গ্রাসে। যখন সৌজন্য যায় কবরে মাটি কল্পতায়, যখন স্তব্ধতা গিলে খেতে থাকে কামুকেরা ত্রাসে, তখন তাকিয়ে দেখো শুদ্ধতার গভীর ব্যাথায়_ আমার ঠোঁটের থেকে একটি যে শব্দ একদিন ফুটেছিলো এই ঠোঁটে তোমারই যে দেহস্পর্শ তাপে, আজ সেই শব্দ দ্যাখো পৃথিবীর বুকে অন্তরীণ_ তবু তারই উচ্চারণে বৃক্ষপাতা বারবার কাঁপে। পড়ে নিও তুমি তাকে, দেখে নিও আকাশে নয়তো সেই শব্দ ‘ভালোবাসি’ নক্ষত্রের মতোই হয়তো।। ৩. তুমিই শুধু তুমি - সৈয়দ শামসুল হক---সংকলিত (সৈয়দ শামসুল হক) তোমার দেহে লতিয়ে ওঠা ঘন সবুজ শাড়ি। কপালে ওই টকটকে লাল টিপ। আমি কি আর তোমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারি? তুমি আমার পতাকা, আমার কৃষির বদ্বীপ। করতলের স্বপ্ন-আমন ধানের গন্ধ তুমি তুমি আমার চিত্রকলার তুলি। পদ্য লেখার ছন্দ তুমি−সকল শব্দভুমি। সন্তানের মুখে প্রথম বুলি। বুকে তোমার দুধের নদী সংখ্যা তেরো শত। পাহাড় থেকে সমতলে যে নামি− নতুন চরের মতো তোমার চিবুক জাগ্রত− তুমি আমার, প্রেমে তোমার আমি। এমন তুমি রেখেছ ঘিরে−এমন করে সব− যেদিকে যাই−তুমিই শুধু−তুমি! অন্ধকারেও নিঃশ্বাসে পাই তোমার অনুভব, ভোরের প্রথম আলোতেও তো তুমি! ৪. একেই বুঝি মানুষ বলে - সৈয়দ শামসুল হক---সংকলিত (সৈয়দ শামসুল হক) নষ্ট জলে পা ধুয়েছো এখন উপায় কি? আচ্ছাদিত বুকের বোঁটা চুমোয় কেটেছি। কথার কোলে ইচ্ছেগুলো বাৎসায়নের রতি, মানে এবং অন্য মানে দুটোই জেনেছি। নষ্ট জলে ধুইয়ে দেবে কখন আমার গা, তোমার দিকে হাঁটবে কখন আমার দুটো পা? সেই দিকে মন পড়েই আছে, দিন তো হলো শেষ; তোমার মধ্যে পবিত্রতার একটি মহাদেশ এবং এক জলের ধারা দেখতে পেয়েছি- একেই বুঝি মানুষ বলে, ভালোবেসেছি। ৫. এখন মধ্যরাত - সৈয়দ শামসুল হক---সংকলিত (সৈয়দ শামসুল হক) এখন মধ্যরাত। তখন দুপুরে রাজপথে ছিলো মানুষের পদপাত। মিছিলে মিছিলে টলমল ছিলো সারাদিন রাজধানী। এখন কেবল জননকূল ছল বুড়িগঙ্গার পানি শান্ত নীরব নিদ্রিত সব। ওই একজন জানালায় রাখে তার বিনিদ্র হাত ছিলো একদিন তার উজ্জ্বল দিন, ছিলো যৌবন ছিলো বহু চাইবার। সারা রাত চষে ফিরেছে শহর খুঁজেছে সে ভালোবাসা। পেতেছে সে হাত জীবনের কাছে ছিলো তারও প্রত্যাশা পাওয়া না পাওয়ার প্রশ্নে হাওয়ার বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে এখন সারারাত হাহাকার। পথে ওড়ে ধুলো, ছাই ওড়ে শুধু পথে যে আগুন ছিলো একদা সে জ্বেলে ছিলো। হৃদয়ে এখন সৌধের ভাঙা টুকরো আছাড় খায়। আলো নিভে যায়, নিভে যায় আলো একে একে জানালায়। থেমে যায় গান তারপরও প্রাণ বাঁশিটির মতো বেজে চলে যেন সবই আছে সবই ছিলো। |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ অঞ্জন কর
প্রকাশকঃ জেরীফ আফতাব কর্তৃক
জেড টাওয়ার (৬ষ্ট তলা), বাড়ী- ০৪, রোড-১৩২, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২ থেকে প্রকাশিত
ইমেইলঃ tribunenewsbd@gmail.com
© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || tribunenewsbd.com