রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে সরাতে লিগ্যাল নোটিশ
প্রকাশ:
১১
অক্টোবর
২০২২ ,
মঙ্গলবার
০৪ : ১০ পিএম প্রদর্শিত হয়েছে ৭৯৭১ বার
|
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সরাতে এবং তাদের সার্ক, বিমসটেক ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে স্থানান্তরের দাবিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিশটি পাঠান। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে বিবাদী করা হয়েছে। আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান নিজেই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে বের করে সার্ক, বিমসটেক ও আসিয়ান দেশগুলোতে শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কোনোভাবেই এককভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে পারে না। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিতে হবে। সার্ক, বিমসটেক ও আসিয়ানভুক্ত বড় দেশগুলোকে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিতে হবে, এটাই আন্তর্জাতিক রীতি।’ নোটিশে আরো বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ তার ভূখণ্ডে মিয়ানমারের ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে। এদের প্রতিপালন করতে বাংলাদেশ সরকারের বছরে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি অনুসরণ না করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে এই বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে দাবি করে নোটিশে আরও বলা হয়, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বাংলাদেশের জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ রোহিঙ্গাদের জন্য খরচ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি অনুযায়ী তিনটি শর্তের যে কোনো একটি পূরণ করলে কোনো নির্যাতিত জনগোষ্ঠীকে অন্য রাষ্ট্র আশ্রয় দিতে পারে। নোটিশে এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রথমত, যদি আশ্রয়দানকারী রাষ্ট্র ১৯৫১ সালের শরণার্থীবিষয়ক কনভেনশন ও ১৯৬৭ সালের প্রটোকলের স্বাক্ষরিত রাষ্ট্র হয়, সেক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্র শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে আইনগতভাবে বাধ্য। দ্বিতীয়ত, কোনো নির্যাতিত জনগোষ্ঠী যখন স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয় সেক্ষেত্রে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো সেই জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে। তৃতীয়ত, যদি একাধিক রাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে শরণার্থী গ্রহণ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। নোটিশে বিষয়টিকে অত্যন্ত দুঃখজনক দাবি করে বলা হয়, ‘বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে উল্লিখিত আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি মানা হয়নি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ কোনোভাবেই এককভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে পারে না। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিতে হবে। যে রাষ্ট্রগুলো আয়তনে বড় তাদের বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিতে হবে, এটাই আন্তর্জাতিক রীতি।’ নোটিশে বলা হয়, ‘সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় লাখ লাখ শরণার্থী ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে প্রবেশ করে। তখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে শরণার্থী নিতে কোটা নির্ধারণ করে দেয়। বর্তমানে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধে ইউক্রেনের শরণার্থীরা ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। এক্ষেত্রে একক কোনো দেশ এসব শরণার্থীদের বোঝা নেয়নি, বরং সম্মিলিতভাবে নিয়েছে। বাংলাদেশ সার্ক ও বিমসটেকের সদস্যরাষ্ট্র। অন্যদিকে মিয়ানমার বিমসটেক ও আসিয়ানের সদস্য। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এসব আঞ্চলিক সংগঠন সার্ক, বিমসটেক ও আসিয়ানকে দায়িত্ব নিতে হবে। এসব সংগঠনের বড় রাষ্ট্রগুলোকে অধিক সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিতে হবে। আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত ছোট, অন্যদিকে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান আয়তনে অনেক বড়। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম আয়তনে বড়। লিগ্যাল নোটিশটিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করে অবিলম্বে এ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সার্ক, বিমসটেক ও আসিয়ান রাষ্ট্রগুলোতে স্থানান্তর করতে হবে। সর্বোপরি শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে এই রাষ্ট্রগুলোকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দায়িত্ব নিতে হবে। শুধুমাত্র বাংলাদেশের ওপর রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব চাপানো যাবে না।’ |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ অঞ্জন কর
প্রকাশকঃ জেরীফ আফতাব কর্তৃক
জেড টাওয়ার (৬ষ্ট তলা), বাড়ী- ০৪, রোড-১৩২, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২ থেকে প্রকাশিত
ইমেইলঃ tribunenewsbd@gmail.com
© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || tribunenewsbd.com