বিএফআইইউ, দুদক ও সিআইডির রিপোর্টে অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট
‘ই-অরেঞ্জের টাকা গেল কোথায়?’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ:
০৩
নভেম্বর
২০২২ ,
বৃহস্পতিবার
০৫ : ১১ পিএম প্রদর্শিত হয়েছে ৭৯৮৪ বার
|
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) দেওয়া প্রতিবেদনের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে বিএফআইইউর আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনাদের প্রতিবেদনে দেখালেন, ই-অরেঞ্জ অনেক টাকা উত্তোলন করেছেন, তাহলে সেই টাকা কোথায় গেল? তার প্রকৃত সুবিধাভোগী কারা? ওই টাকা কোথায় ব্যবহার হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা নেই। আপনাদের এই প্রতিবেদনে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। এই প্রতিবেদনে প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি। এটা খাপ ছাড়া।’ আর সিআইডির রিপোর্টের বিষয়ে আদালত বলেন, ‘তাদের রিপোর্টেও পরিষ্কার ও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রিপোর্টে তারা পাশ কাটিয়ে গেছে।’ এ সময় রিটকারীদের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম আদালতকে বলেন, ‘রিপোর্টে সব তথ্য সঠিকভাবে আসেনি, এজন্য পূর্ণাঙ্গ একটি রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা চাইছি। একটা ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের নামে এত টাকা লেনদেন হচ্ছে, এই টাকা কোথায় যাচ্ছে, কি কাজে ব্যবহার হচ্ছে, এর ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছে কি না সেটা তো এনবিআরের দেখা উচিত। আর বিএফআইইউর কাজটা কি?’ তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘এসব লোকের কারণেই ঝামেলা হচ্ছে। দেশে কতো উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ রাস্তাঘাটের কি উন্নয়ন হয়েছে। দেখলে মনে হবে না দেশের মধ্যে আছি। কতিপয় দুর্নীতিবাজ লোকের কারণে এখন সংকট তৈরি হচ্ছে।’ আদালত বলেন, ‘আমরা কাজ করছি, জনগণের জন্য। দেশ সোনার বাংলা হোক সেটা আমরা চাই।’ এরপর হাইকোর্ট ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবীনের ভাই বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ই-অরেঞ্জ নিয়ে বিএফআইইউ দেওয়া প্রতিবেদন সংশোধন করে ফের তা দাখিল করতে বলে আদেশের জন্য আগামী ৪ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একে এম আমিন উদ্দিন মানিক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আদেশের বিষয়ে আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ‘বিএফআইইউর প্রতিবেদনে সোনিয়া মেহজাবিন, স্বামী মাসুকুর রহমান, ভাই শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজসহ আরও যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, তাদের লেনদেন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য, এছাড়া আরও যাদের নাম এসেছে তাদের সম্পত্তির সুনির্দিষ্ট বর্ণনাসহ সব কিছু পরিষ্কার করে তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন করে বিএফআইইউ, দুদক, পুলিশ প্রধানকে রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি শত শত কোটি টাকার যে লেনদেন হয়েছে, তা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে কি না তা জানাতে এনবিআরের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর আগে বুধবার (২ নভেম্বর) ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান ও ভাই শেখ সোহেল রানার অস্বাভাবিক লেনদেন ও অর্থ লোপাট নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবীন, তার ভাই বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ গ্রাহকদের ১৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ১৩টি ব্যাংক হিসাব থেকে এসব টাকা সরিয়েছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ই-অরেঞ্জ, অরেঞ্জ বাংলাদেশ ও রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের নামে ১৩টি হিসাব খুলে লেনদেন করেন। এ ১৩ হিসাবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লেনদেন করেছেন। এই সময়ে ১,১১১ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা জমা ও ১,১০৯ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মোট ২,২২১ দশমিক ৪২ কোটি টাকার লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। আর সোনিয়া ও তার স্বামী মাসুকুর রহমানের নামে ২৪টি হিসাবে লেনদেন করা হয়। ওই ২৪টি হিসাবের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি প্রায় ১২০ কোটি টাকার লেনদেন করেন। গোয়ান্দা সংস্থা সিআইডির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পরিচালিত সব হিসাব লেনদেন ২০২১ সালের ২৫ জুলাই স্থগিত করা হয়েছে।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে ই-অরেঞ্জের মালিকনায় সোনিয়া মেহজাবিন থাকলেও পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করে তার ভাই পুলিশ কর্মকর্তা (বরখাস্ত) শেখ সোহেল রানার স্ত্রী নাজনীন নাহারা বিথির নামে হস্তান্তর করা হয়। সোনিয়া মেহজাবিন, স্বামী মাসুকুর রহমান, ভাই শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ নগদে টাকা উত্তোলন ও ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর এবং নিজ নামে ক্রয় করার জন্য মোট ১৮ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা ই-অরেঞ্জের হিসাব হতে স্থানান্তর/উত্তোলন করেন। গ্রাহকদের অগ্রিম মূল্য পরিশোধিত অর্ডারের কাঙ্ক্ষিত পণ্য সরবরাহ না করে সন্দেহভাজন উল্লিখিত অর্থ তাদের ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর নগদে উত্তোলন ও ব্যক্তিগত স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করেছেন মর্মে পরিলক্ষিত হয়েছে, যা প্রতারণার শামিল। |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ অঞ্জন কর
প্রকাশকঃ জেরীফ আফতাব কর্তৃক
জেড টাওয়ার (৬ষ্ট তলা), বাড়ী- ০৪, রোড-১৩২, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২ থেকে প্রকাশিত
ইমেইলঃ tribunenewsbd@gmail.com
© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || tribunenewsbd.com