শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
● পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল উদ্বোধন      ● সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে      ● বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে হাতিরঝিল থেকে পানি নিচ্ছে হেলিকপ্টার      ● বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের খোঁজখবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী      ● বঙ্গবাজারে ফায়ার সার্ভিসের ৫০ ইউনিট, ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন      ● ৫ ঘণ্টায়ও নেভেনি বঙ্গবাজারের আগুন      ● ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে হামলা, টিয়ারশেল নিক্ষেপ      ● আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের সাথে নৌ-সেনা ও বিমানবাহিনী      ● বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড: আশপাশের ৪ ভবনে ছড়িয়েছে আগুন      ● জ্বলছে বঙ্গবাজার : প্রতিনিয়ত বাড়ছে আগুনের তীব্রতা     
হাতিরঝিলে বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের রায়ে আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২২ , সোমবার ০১ : ১১ পিএম   প্রদর্শিত হয়েছে ৮১৭৯ বার

রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদসহ ৪ দফা নির্দেশনা ও ৯ দফা সুপারিশ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ বেঞ্চ সোমবার (৭ নভেম্বর) এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) করা এ সংক্রান্ত লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে বলে জানিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।


গত ১৯ জুন হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদসহ ৪ দফা নির্দেশনা ও ৯ দফা সুপারিশ সম্বলিত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান চেম্বার জজ আদালত। চলতি বছরের ২৪ মে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদসহ ৪ দফা নির্দেশনা ও ৯ দফা সুপারিশ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের স্বাক্ষরে মঙ্গলবার (২৪ মে) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৫৫ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে রিট মামলাটি একটি চলমান আদেশ হিসেবে অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে ওই রায় স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল করে রাজউক। 


রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, রাজধানীর হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদকে কোনোরূপ ধ্বংস বা ক্ষতি করা যাবে না। প্রতিটি ফোঁটা পানি অতি মূল্যবান। পানির চেয়ে তথা সুপেয় পানির চেয়ে মূল্যবান আর কোনো সম্পদ এ পৃথিবীতে নেই। সুতরাং প্রতিটি ফোঁটা পানির দূষণ প্রতিরোধ করা একান্ত আবশ্যক। 


রায়ে আদালত আরও বলেছেন, ‌‘দ্বিতীয় কোনো পৃথিবী নেই। এ পৃথিবী ব্যতীত আর কোনো গ্রহে পানির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে এক ফোঁটা পানি এ পৃথিবীর বাইরে থেকে আনতে সক্ষম হয়নি। অথচ উক্ত খরচের শত ভাগের এক ভাগ টাকা খরচ করলে আমরা আমাদের গ্রহের পানিকে দূষণমুক্ত ব্যবহারযোগ্য রাখতে সক্ষম। হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদকে কোনোরূপ ধ্বংস বা ক্ষতি করা যাবে না। এছাড়া যেসব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া হাতিরঝিল ও পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক প্রচারণা ও সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছে রায়ে তাদের অভিনন্দন জানানো হয়েছে।’


হাইকোর্টের রায়ে হাতিরঝিল সম্পর্কে বলা হয়েছে, হাতিরঝিলসহ তেজগাঁও এলাকায় অনেক ভূ-সম্পত্তি ভাওয়াল রাজার এস্টেটের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজার হাতিরপাল এই ঝিলে স্নান করত এবং জলে বিচরণ করত বলে কালের পরিক্রমায় এর নাম হয় ‘হাতিরঝিল’। রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট আরও বলেছেন, যেহেতু পৃথিবীর উপরিভাগের ৭১ শতাংশ পানি দ্বারা আবৃত থাকলেও তার মাত্র ৩ শতাংশ ফ্রেশ ওয়াটার তথ্য ব্যবহারযোগ্য পানি; যেহেতু পৃথিবীর ৮৭ শতাংশ পানি সমুদ্রের যা লবণাক্ততার কারণে যেমনি পানযোগ্য নয় তেমনি ফসল উৎপাদনেও ব্যবহারযোগ্য নয়। যেহেতু পৃথিবীর ৩ শতাংশ ফ্রেশ ওয়াটার তথ্য ব্যবহারযোগ্য পানির মধ্য থেকে ২.৫ শতাংশ পানি মাটি, বায়ুমণ্ডল, গ্লাসিয়ার (Glaciers) এবং পোলার আইস ক্যাপ (polar ice caps) এ আবদ্ধ থাকার কারণে, চরম দূষিত থাকার কারণে এবং মাটির অনেক গভীরে কারণে ব্যবহার করা সম্ভব নয়; যেহেতু পৃথিবী ৩ শতাংশ ফ্রেশ ওয়াটার তথ্য ব্যবহারযোগ্য পানির মধ্য থেকে মাত্র ০.৫ শতাংশ সমগ্র পৃথিবীর মানুষের জীবনধারণ ও ব্যবহারের জন্য, সমগ্র পৃথিবীর প্রাণীকূলের বেঁচে থাকার জন্য মজুত আছে। যেহেতু পৃথিবীর জনসংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাক না কেন এবং প্রাণীকূল ও ফসলাদির উৎপাদন যতই বাড়ানো হোক না কেন ফ্রেশ ওয়াটার তথ্য ব্যবহারযোগ্য পানি ওই ০.৫ শতাংশ নির্ধারিত এবং যেহেতু ০.৫ শতাংশ এর ওপর ফ্রেশ ওয়াটার তথা ব্যবহারযোগ্য পানি বাড়ানোর কোনো উপায় নেই এবং যেহেতু এই ০.৪ শতাংশ ফ্রেশ ওয়াটার তথ্য ব্যবহারযোগ্য পানি নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, পুকুর-দিঘী, মাটির নিচে এবং সব ধরনের জলাভূমিতে অবস্থিত এবং যেহেতু ফ্রেশ ওয়াটার তথা ব্যবহারযোগ্য পানির উপরোল্লিখিত ০.৫ শতাংশ যথাযথভাবে সংরক্ষণ এবং এর সর্বোত্তম ব্যবহার মানব জাতির জন্য একান্ত অপরিহার্য এবং সেহেতু সব জলাভূমি, লেক এবং বিল সংরক্ষণ করা আমাদের সবার বেঁচে থাকার জন্য একান্ত অপরিহার্য এবং যেহেতু রিটের প্রতিপক্ষরা (বিবাদীরা) বেআইনিভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় রেস্টুরেন্ট, দোকান-পাট তথা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ দিয়ে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার মূল্যবান সুপেয় পানি এবং এর উপরিস্থিত ও পারিপার্শ্বিক নান্দনিক সৌন্দর্য দূষণ এবং নষ্ট করছে। 


হাইকোর্ট রায়ে হাতিরঝিলের পানি এবং এর নান্দনিক সৌন্দর্য ও মহামূল্যবান এই জাতীয় সম্পত্তি সংরক্ষণ ও উন্নয়নে চার দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলো হলো: 


১. সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদী রায় অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার ফুসফুস বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকা যা ‘হাতিরঝিল’ নামে পরিচিত পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি তথ্য জনগণের ন্যাস সম্পত্তি তথা জাতীয় সম্পত্তি।


২. হাতিরঝিল এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ এবং নির্মাণ-সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদীর রায় অনুযায়ী বেআইনি এবং অবৈধ।


৩. হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দ করা সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত মর্মে এসব বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হলো।


৪. রায়ের অনুলিপি প্রাপ্তির পরবর্তী ৬০ দিনে মধ্যে সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য প্রতিপক্ষদেরকে (রিটের বিবাদীরা) নির্দেশ দেওয়া হলো।


এছাড়া আদালত হাতিরঝিলের বিষয়ে ৯ দফা সুপারিশসহ পরামর্শ দেওয়া হলো। সেগুলো হলো: 


ক. হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং পরিচালনার নিমিত্তে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ তথা হাতিরঝিল লেক সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি অধীন গঠন করা। খ. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কন্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ করা। গ. জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের টয়লেট স্থাপন করা। ঘ. নির্ধারিত দূরত্বে বিনামূল্যে সব জনসাধারণের জন্য পান করার পানির ব্যবস্থা করা। ঙ. পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরি করা। চ. পানির জন্য ক্ষতিকর হেতু লেকে সব ধরনের যান্ত্রিক যান তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। ছ. লেকে মাছের অভয়ারণ্য করা। জ. হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করা। ঝ. হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রেভিনিউ (রাজস্ব) বাজেট থেকে বরাদ্দ করা। 


বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। ১ হাজার ৯৭১.৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৩০২ একর জমির উপর এ প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠিত। প্রকল্প এলাকার মোট ১৬ কি.মি. রাস্তায় কোনো বাস অথবা মিনিবাস চলাচলের অনুমতি ছিল না। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৫/২০০৯তম সভায় অনুমোদিত লে-আউটে প্রস্তাবিত ওয়াকওয়ে ও রোডওয়ে এলাইনমেন্ট ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। প্রকল্পটি ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, বৃষ্টি, বন্যাজনিত পানি ধারণ, বৃষ্টির পানি পয়ঃনিষ্কাশন ও নগরের নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। খালগুলোর জন্য প্রস্তাবিত সুবিশাল লেকটি একটি নিয়ন্ত্রিত ‘হাইড্রোলিক সিস্টেম’ হিসাবে কার্যকর হয়। এতে ওই এলাকার ড্রেনেজ ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পায়, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় ও সৌন্দর্যমণ্ডিত পাবলিক স্পেসের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। রমনার পাশাপাশি একটি সুবিশাল নীল জলাধারবেষ্টিত উন্মুক্ত স্থানের অভাব লাঘব হয়। যা বিশ্বের কাছে ঢাকা মহানগরীর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে।

« পূর্ববর্তী সংবাদ পরবর্তী সংবাদ »





  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ অঞ্জন কর

প্রকাশকঃ জেরীফ আফতাব কর্তৃক

জেড টাওয়ার (৬ষ্ট তলা), বাড়ী- ০৪, রোড-১৩২, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২ থেকে প্রকাশিত

ইমেইলঃ tribunenewsbd@gmail.com

© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || tribunenewsbd.com